কেদারা উপাখ্যান! – হাবিবুর রহিম

যখন নানান কার্য্য উপলক্ষে এই কার্য্যালয় ওই কার্য্যালয়ে গমন করিয়া ইস্পিরিং যুক্ত চাক্কাওয়ালা কেদারায় চিত হইয়া শুইয়া যাইবার মতো করিয়া বসিয়া থাকি তখন কখনও ভাবি নাই এই জিনিসের দাম কতোটা বেশী হইতে পারে! যখন কেদারায় অবসরভাবে বসিয়া থাকি তখন কাজের কাজ বলিতে কেবল বহুচক্রযানের মতো উহাকে এদিক সেদিক নড়াচড়া করি আর চড়কির মতো গোত্তা খাইয়া আরামের বিভিন্ন কায়দা কৌশলের কসরত করি কিন্তু মূল্য ও শানশওকতে তাহার অবস্থান যে কতোটা উচ্চে তাহা ভাবিবার চিন্তা কখনো মস্তকে উদয় হয় নাই।

আজিকে খুব করিয়া মনে হইলো একটা ভালো মানের আরাম কেদারা খরিদ করিয়া নেওয়া দরকার। যাহার সাথে এই প্রিয় পশ্চাৎদেশ ঠেকাইয়া আমার দূ্ঃসম্পর্কের অধ্যয়নের টেবিলটার সহিত কিছুটা ভাব ভালোবাসা তৈরি করিবো। আর কদিন বাদেই কর্ম কমিশনের মহামান্য অধিকর্তাগণ আমার মতো নধর দেহের (!) গোবেচারা ছাত্রকে পরীক্ষার শেলে এফোঁড় ওফোঁড় করিবার জন্য এখন থেকেই নিয়মিত ‘ওয়ার্ম আপ’ করিতেছেন! সমগ্র দেহে পিচ্ছিল সরিষার তৈলমাখা সিদেল চোর যেমন করিয়া ছোট্ট গর্ত দিয়া বাহির হইয়া আসে আমিও যাতে এই ‘চিপা’ হইতে ফাঁক ফোকর বাহির করিয়া পালাইয়া আসিতে পারি সেই জন্যে হইলেও কিছুটা অধ্যয়নতো অবশ্যই করা উচিত। আমি ফাঁকিবাজ হইতে পারি তাই বলিয়া জীবনে ভয়কে তো আর অবহেলা করিয়া বসিয়া থাকিতে পারি না!

সেই চিন্তামতে পকেটে হাজার কয়েক সকল অনর্থের মূল যাহাকে বলে সেই অর্থ লইয়া গমণ করিলাম বসুন্ধরা বানিজ্যালয়ের নিকটবর্তী আসবাব পত্রের নামী দামী প্রদর্শনীগৃহ গুলোর দিকে। ভাবিয়াছিলাম প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কেদারা কিনিলে প্রথম বর্ষের স্বল্পমূল্যে ক্রয়কৃত সেই নিরীহ গোছের কেদারাটির মতো মাস কয়েকেই ভাঙ্গিয়া পড়িবেনা। আমার প্রজন্ম থাকিয়া প্রজন্মান্তরে সকলে পা এর উপর পা তুলিয়া এই কেদারায় বসিয়া জীবন অতিবাহিত করিবে। কিন্তু তাহার মূল্য শুনিবা মাত্রই আমার সকল আশা ভরসাই সহসা ধুলিতে মিশিয়া গেলো। মাশাল্লাহ এক একটা কেদারার দাম মনে মনে যতো ধারণা করি বাস্তবে দেখি মুল্য তাহার চাইতে তিন চারগুণ করিয়া বেশী। একটু ভালো একটা কেদারার দিকে তাকাইলেই দশাসই পোষাকের চৌকশ বিক্রয় কর্মী ঠাশ করিয়া দশ হাজারের ওপর দাম হাঁকায়। তবু অবাধ্য চোখ নালায়েকের মতো বারবার লোভাতুর ভাবে তাহার চাইতেও জৌলুস মাখা কেদারার দিকে তাকাইতে চায়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেই দৃষ্টি কেদারার গায়ে সাটা তিরিশ হাজার টাকা লেখা মূল্য নির্দেশিকার হাতে চপেটাঘাত খাইয়া হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসে! খেয়াল রাখিবেন আমি কিন্তু তিরিশ হাজারে এক গুচ্ছ কেদারা কিনিবার কথা বলি নাই বলিয়াছি মাত্র একটি কেদারার কথাই।

অবশেষে আকাঙখিত কেদারার অতি উচ্চ মূল্য দেখিয়া একসময় বুঝিতে পারিলাম ইহা আমার সক্ষমতার সহিত দূরতম যোগ ও রাখে না। শেষকালে তাই কোন কেদারা না কিনিয়াই ব্যর্থ মনোরথে আপন কক্ষের দিকে পদব্রজে যাত্রা শুরু করিলাম। তখন আমার মনে এই অক্ষমতার বোধ কি উথালা পাথাল চালাইতেছিলো তাহা বলিয়া পাঠকদের ধৈর্য্যচূত্যি ঘটাইতে চাহি না। পাশাপাশি মনে হইতে ছিলো আহারে যাহাদের পশ্চাৎদেশগুলো এই মহামূল্যবান কেদারার ছোঁয়া পায় তাহারা না জানি কতোটা মূল্যবান!

আর আমি এইটাও বুঝিলাম যে আমার পশ্চাৎদেশ অদ্যাবধি অতোটা ‘মূল্য’ অর্জন করিতে পারে নাই। অতএব কী আর করা যাইবে! আপন কক্ষের খটমটে কাষ্ঠ নির্মিত কেদারায় বসিয়াই অধ্যয়নে মনোনিবেশ করিতে মনস্থ করিলাম। বসিবার পূর্বে কেদারার উপরিতলের কাঠিন্য কিছুটা হ্রাস করিতে এক প্রস্থ কাঁথা, একটা বহুল ব্যবহৃত মশারী আর একটা পুরোনো বিছানার চাদর ভাজ করিয়া উহার উপর রাখিয়া লইলাম। ইহাতেও যদি তলদেশ কিছুটা স্বস্তি পায়! যদি চেয়ারের নির্মম কাষ্ঠের মন যদি কিছুটা নরম হয়! আমার মতো একজন দুঃস্থ তরুণ চিকিৎসক ইহার চাইতে বেশি আর কিইবা করিতে পারে। পাশাপাশি ইহাও বুঝিতে পারিলাম যে অধ্যয়নের গতিবেগ আরো জোর কষিয়া বাড়াইতে হইবে। না হয় এই অধমের পশ্চাৎদেশের মূল্য সহসাই বাড়িতেসে না!

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top