“সাগর, তারাতারি যা তো হাসানদের বাসায় ইফতারটা দিয়ে আয় । আমি রান্নাঘরে গেলাম ।” বলেই সাহেদা খানম রান্নাঘরে চলে গেলেন । ঈদের ছুটিতে একমাত্র ছেলে বাসায় এসেছে অনেকদিন পর । এ আনন্দে এটা সেটা অনেক কিছুই বানাচ্ছেন । অনেক ব্যস্ততা তাঁর । আর এদিকে সাগর শুয়ে শুয়ে ফেসবুক গুতাচ্ছে ।
পাঁচ সাত মিনিট পর সাহেদা খানম রান্নাঘর থেকেই তাড়া দিলেন, “কীরে তুই এখনো যাস নি এখনো। আজানের তো তেমন দেরী নেই । এতো কী করিস সারাদিন মোবাইলে । যা তারাতারি ।”
নিতান্ত অনিচ্ছায় সাগর উঠে দাড়ায় । এখন না গেলে আম্মুর চিল্লাচিল্লিতে টেকা যাবে না । এদিকে মাহিদ ভাইয়ের একটা অসাধারন স্ট্যাটাস পড়ছে ও । লোকটা এতো সুন্দর করে লেখে কিভাবে ! পড়া শুরু করলে আটকে যেতেই হয় ।একেবারে নট নড়ন চড়ন । বেরসিক আম্মু বুঝলো না ব্যাপারটা । লেখাটার কমেন্ট গুলোও দারুণ হচ্ছে । আম্মুটা এত্তো পেইন দেয় না ! যাই হোক মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই ডাইনিং রুমে যায় ও । টেবিল থেকে ইফতারীর প্লেটটা হাতে নেয় হাতড়ে হাতড়ে । প্লেটটা তেমন ভারী না । আম্মু আরেকটু বেশী ইফতারী দেবে না ! যাক এখন একথা বললে আম্মু আরো কিছু ইফতার দিয়ে ঝামেলা বাড়াবেন । এত্তো সময় ওর নেই ।এদিকে শাহীন নক করেছে ফেসবুকে, “হেই ডুড ?” শালার ভাব কতো ইংরাজীতে ভাব নেয় ! “এখনি তোর ইংরাজী প্রেম ছুটাচ্ছি দাড়া ।” আস্তে বলে সাগর ।
একহাতে ইফতারীর প্লেট টা কোনরকমে ধরে অন্যহাতে মোবাইল ধরে বুড়ো আঙ্গুলে শাহীনের সাথে চ্যাট করতে করতে দরজা দিয়ে বের হয় । হাসানদের বাসা একই বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায় । প্রত্যেকটা সিড়ি ওর চেনা । না দেখে দেখে যেতে একটুও কষ্ট হয় না । আবার হোমপেজ রিফ্রেশ করে সাগর সামনের ঈদ প্লানিং নিয়ে বেশ কিছু পোষ্ট দেখা যাচ্ছে । কয়েকটাতে লাইক শেয়ার দেয় । এর মধ্যেই হাসানদের দরজার সামনে চলে আসে ও । এক ফাঁকে কলিংবেল চাপে । হাসান যে বাসায় নেই এটা সাগর জানে । ও ফিরবে আগামী কাল । কী এক পরীক্ষা চলছে ।
আন্টি কিছুটা ব্যস্ত দরজা খুলতে সময় লাগে কিছুটা । অবশ্য এ দেরীতে অস্বস্তি লাগে না সাগরের । নিউজ ফিডে দারুণ চাপ ।মানুষ তাদের সবটুকু আবেগ নিংড়ে ফেসবুকে ঢেলে দেয় কীনা কে জানে ? এত্তো আবেগ পায় কই ! কঠিন অবস্থা । এদিকে শাহীন তো ইনবক্সে আরেক গল্প ফেদে বসেছে ।
আন্টি একসময় দরজা খোলেন । দেখেন সাগর দাড়িয়ে আছে ।সাগর পাশের পাঁচতলার আজমীরা ভাবীর ছেলে । ঢাকা মেডিকেলে পড়ে । হাসান তো সাগর ভাই বলতে অজ্ঞান । এই সময়ে সাগরকে দেখে বেশ খুশি হন তিনি । হাতের প্লেটের দিকে একটু তাকিয়ে সাগরের দিকে তাকান আবার । মুখে হাসি ।
– “বাবা, কেমন আছো ? কখন এলে ?
– “এইতো আন্টি ভালো ।কাল রাতে পৌছেছি ।” আম্মু আপনাদের জন্য ইফতার পাঠালেন… বলে সাগর প্রথম বারের মতো প্লেটের দিকে তাকায় । তাকিয়েই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তার। কোথায় ইফতার ? দুটো মাঝারি সাইজের শশা প্লেটে গড়াগড়ি খাচ্ছে ! সাগর খেয়াল না করে ইফতারের প্লেটটা না নিয়ে পাশ থেকে ওদের ইফতারের জন্য রাখা শশার প্লেট নিয়ে চলে এসেছে !