আমরা জাতি হিসেবে মূলত সুযোগের অভাবে কিংবা সমাজের ভয়ে চরিত্রবান ! মানুষের বাঁকা চাউনির ভয় যদি আমাদের না থাকতো;দুর্নীতিবাজ,চোর অসৎ লোক হিসেবে কুখ্যাত হওয়ার ভয় যদি না থাকতো তাহলে আমাদের সমাজের বিশাল একটা অংশই কোন না কোন খারাপ কাজে অবশ্যই জড়িয়ে পড়তো,এটা নিশ্চিত ।একজন রিক্সাওয়ালার জন্য যেমন সত্য,ঠিক তেমনি মেডিকেল পড়ুয়া দেশের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্যও তা সত্য। বিরক্ত হলেন আমার ওপর? কষে একটা ধমক দিতে মন চাইছে? আমার কথাটুকু একটু শুনুন দয়া করে তারপর নাহয় বকবেন!
রিকসাওয়ালার দুর্নীতির সুযোগই বা কতটুকু? বড়জোর না হয় একটু ভাড়া নিয়ে এদিক ওদিক করতে পারবে, ঐটুকুই!আমাদের অনেকেও ঠিক তার সামর্থ্যের আলোকে দুর্নীতি করে যাচ্ছে ! একটা প্রশ্নের উত্তর দিনতো! আমাদের কেউ কেউ কী ক্লাসে প্রক্সি দেয় না? ক্যান্টিনে খেয়ে পয়সা না দিয়ে চলে যায় না? গায়ের জোড়ে মাসের পর মাস ক্যান্টিনে ফাও খায় না? সুযোগ পেলেই পেশাগত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করে না? উত্তরে আপনাকে ‘হ্যা’ বলতেই হবে! এবার বলুন, এগুলো কী দুর্নীতি নয়? আমি বলবো এই বয়সে এর চেয়ে বেশী দুর্নীতি করার সু্যোগ তার নেই। যখন পরিণত বয়সে সে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হবে, দায়িত্বের পরিমান অনেক বেড়ে যাবে;তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে চাহিদা তখন ঠিক যেমনি নিজের সবটুকু প্রচেষ্টা দিয়ে এই দুর্নীতিগুলো এখন করছে তেমনি তখন সে পূর্ণ প্রচেষ্টা দিয়েই সে সময়ের অপরাধগুলো করবে। অবশ্যই সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করেই ।অবশ্য সে নিজেকে জাস্টিফাইড করার জন্য অনেক হাস্যকর যুক্তি ঠিকই থাকবে তখন ।যেমন,এই পোড়া দেশ আমাকে কী দিয়েছে! আমাকে এতো কম বেতন দেয়া হয়,প্রত্যন্তু অঞ্চলে আমাকে ফেলে রাখা হয়েছে এতোদিন । আমি কেন ঔষধ কোম্পানীর কাছ থেকে ঘুষ খাবো না! কেন ক্লিনিক থেকে কমিশন নেবো না! হাসপাতালে বসে রোগী দেখেও কেন আলাদা ফী নেবো না! কেন ? না, না, শুধু পেরিফেরিতে ছড়িয়ে থাকা ডাক্তাররাই কমিশন নেন এমন না রাজধানীর কেন্দ্রে বসেও এই কাজ অনেকেই দেসারসে করে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই তাদেরও কোন অজুহাত তৈরী আছে ! যাইহোক এখানে সব ডাক্তার কে দায়ী করে জেনারালাইজ কোন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে না।যাদের কথা বলা হচ্ছে তা আমি প্রথমেই বলেছি। তাই দয়া করে অযথা রাগ করবেন না।
আমাদের সমাজে একজন সমাজে একজন সৎ মধ্যবিত্তের মানুষের চেয়ে একজন অসৎ বিত্তশালীই বেশী পুজনীয়! সমাজও তাই দুর্নীতিকে বাহবা দিয়ে যাচ্ছে। জীবনটাকে অসহ্য করে দেয়া বদলী বানিজ্যের মতো নোংরামীতে লিপ্ত যে দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জন আপনি তাকে আপনার পোষ্টিং পাওয়ায় ঝামেলা হলে যত গালি গালাজই করছেন ।আবার আপনি যখন সিভিল সার্জন হচ্ছেন তখ আপনিও পারছে না শত সহস্র চকচকে নোটের মায়া ছাড়তে। তাহলে ব্যাপারটা একই দাড়ালো না?
খুবঈ অবাক হই,কষ্ট পাই।যখন দেখি পরিচিত কিছু মানুষ পরীক্ষা আগের রাতগুলোতে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য হন্যে হয়ে ঘোরে। এমন কী গর্বভরে জনসম্মুখে উপরতলার চোরদের সাথে নিজেদের যোগসাজশের কথা নির্লজ্জভাবে প্রচার করে।বলে, ‘একজনও যদি প্রশ্ন পায় তবে সে প্রশ্ন পাবে এমন অহংকার করে’। মানে আমি অনেক বড়ো চোর । ঘেন্না হচ্ছে ? এবার মনে করে দেখুন তো আপনার প্রফ পরীক্ষার সময় কারো কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের খোজ নিয়েছিলেন কী না ! কখনো কী ভেবেছেন এটা কতোবড় অপরাধ ?
এই মানুষগুলোর দিকে কেন যেনো তাকাতে ইচ্ছে করে না,কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ঠিক এমনিভাবে সরকারী একটা প্রতিষ্ঠানের একটা সম্পদ মূলদামের চার পাঁচগুণ বেশী দিয়ে কেনে যেসব দুর্নীতিবাজেরা । এ সব ফাইলগুলো যখন লাখটাকা ভর্তি উপঢৌকনসহ পরিচালক, বিভাগীয় প্রধানদের টেবিল ঘুরে আসে তখন সেই সব মহান জ্ঞানীগুণীদেরকেও আর শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা হয় না। শিক্ষার এ অপমান দেখে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়! তাহলে শুধু শুধু রাজনীতিবিদদেরই গাল দেয়া কেনো? আমরাই কী কম যাই ? প্রয়োজনে এমপি মন্ত্রীদের হাত পা ধরে হলেও নিজের অবৈধ সুবিধার জন্য তদবির করারে পারি।আর মুখে মুখে সততা আর নিষ্ঠার ভং ধরি।
ফেসবুক খুললেই দেখি ডাক্তারদের অধিকার নিয়ে অনেক আহাজারী। আমাদেরকে মূল্যায়িত করা হচ্ছে না। ভিজিট আরো বাড়ানো দরকার এইসব । ডাক্তারদের নিজেদের দোষ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি । অবশ্যই এর দরকার আছে তবে আমরা কী জেনেশুনে কিছু সত্য গোপন করছি না? আমাদের সবাই কি আসলেই তার দায়িত্বটুক সঠিকভাবে পালন করছেন? এমন কী আমাদের সব আত্মীয় স্বজনরা কী ডাক্তারদের কাছে সঠিক সেবা পাচ্ছেন? অধিকাংশই কী ডাক্তারদের ওপর অসন্তুষ্ট নয়?এমন কেনো ? এর কোন দায়ভারই কী আমাদের নেই? ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের বিশাল একটা অংশ কী ডাক্তাররা নন? তারা কী কমিশন বানিজ্য করছেন না?
অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।আমাদের অধিকার আদায়ে এই শতধা বিভক্ত চিকিৎসক সমাজের এক হওয়াটা সময়ের দাবী।কিন্তু তাই বলে আমরা আমাদের ভুল গুলোকেও অস্বীকার করবো না অবশ্যই।এগুলোরও সমাধান জরুরী । একটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের অনেক বাড়তি কাজের চাপের জন্য আমরা শক্ত প্রতিবাদ জানাবো কিন্তু তাই বলে হাসপাতালে বসেই অফিস আওয়ারে দুইশত টাকা করে আলাদা ভিজিট নেয়াকে জাস্টিফাই করতে যাওয়াটা ঠিক নয় অবশ্যই। । we have to tell a spade a spade.এমন যারা করবে তাদেরকেও আমরা সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে অবশ্যই।
আমরা যখন আমাদের অগণিত অর্জনের মধ্যে আবর্জনার মতো আটকে থাকা অল্পকিছু সীমাবদ্ধতা কে অতিক্রম করতে পারবো তখন ঠিকই সমাজের কিছু পচা মস্তিষ্কের প্রাণী আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে সুবিধা করতে পারবে না।আমাদের পাশে থাকা অগণিত সাধারণ জনতাই তখন ওদের দাবড়ে দেবে।তখন জনগনই হবে আমাদের মর্যাদার সংরক্ষক । এ জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।প্রয়োজন দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবীত এক সাহসী মিছিল ।যে মিছিল এই অযুত সমস্যাগ্রস্থ এ স্বাস্থ্যখাতকে পৌছে দেবে পরম প্রার্থিত লক্ষ্যে,শামিল হবে সোনার বাংলাদেশ গড়ার মিশনে ।
সপ্ন দেখি সেই সুন্দর দিনগুলোর,সেই মোহময় মুক্তির…