গর্ভকালীন চেক আপ এবং পরীক্ষা

গর্ভকালীন চেক আপ এবং পরীক্ষা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের সময় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপের সঠিক মূল্যায়ন এবং সম্ভাব্য জটিলতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই অধ্যায়ে গর্ভকালীন চেক আপ এবং পরীক্ষার সময়সূচী এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রথম ত্রৈমাসিক (০-১২ সপ্তাহ)

  1. প্রথম চেক আপ: গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে যত দ্রুত সম্ভব প্রথম চেক আপ করুন। এই সময় চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্য এবং গর্ভাবস্থার সঠিক মূল্যায়ন করবেন।
  2. রক্ত পরীক্ষা: রক্তাল্পতা, রক্তের গ্রুপ, থাইরয়েড ফাংশন, ডায়াবেটিস, এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।
  3. ইউরিন পরীক্ষা: ইউরিনের মাধ্যমে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করা যায়।
  4. আল্ট্রাসাউন্ড: প্রথম ত্রৈমাসিকে একটি আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় যাতে গর্ভের স্থায়িত্ব, ফিটাসের বৃদ্ধি এবং হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করা যায়।
  5. রুবেলা স্ক্রিনিং: রুবেলা এবং অন্যান্য ইনফেকশনের স্ক্রিনিং করা হয়।
  6. জেনেটিক কাউন্সেলিং: প্রয়োজন অনুযায়ী জেনেটিক কাউন্সেলিং এবং পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ)

  1. রুটিন চেক আপ: প্রতি মাসে একবার বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেক আপ করুন।
  2. আল্ট্রাসাউন্ড: ১৮-২০ সপ্তাহে একটি এনোম্যালি স্ক্যান করা হয় যাতে শিশুর শারীরিক গঠন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা যায়।
  3. গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (GTT): ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস নির্ণয় করতে এই পরীক্ষা করানো হয়।
  4. রক্তচাপ এবং ওজন মাপা: প্রতিটি চেক আপে রক্তচাপ এবং ওজন মাপা হয়।
  5. রক্ত পরীক্ষা: হিমোগ্লোবিন এবং আয়রনের মাত্রা নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।

তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ)

  1. রুটিন চেক আপ: প্রতি ২-৩ সপ্তাহে একবার এবং গর্ভধারণের শেষ দিকে প্রতি সপ্তাহে চেক আপ করুন।
  2. আল্ট্রাসাউন্ড: ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে ফিটাসের অবস্থান এবং অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়।
  3. নন-স্ট্রেস টেস্ট (NST): ফিটাসের হার্ট রেট এবং মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করতে এই পরীক্ষা করানো হয়।
  4. বায়োফিজিকাল প্রোফাইল (BPP): ফিটাসের সামগ্রিক স্বাস্থ্য নির্ণয় করতে BPP করা হয়, যাতে আল্ট্রাসাউন্ড এবং NST অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  5. রক্ত পরীক্ষা: হিমোগ্লোবিন এবং আয়রনের মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।

গর্ভকালীন চেক আপের সময়সূচী

সপ্তাহপরীক্ষাউদ্দেশ্য
৮-১২প্রথম চেক আপ, রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ডগর্ভধারণ নিশ্চিতকরণ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন
১৬-১৮রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষাহিমোগ্লোবিন এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন নির্ণয়
১৮-২০এনোম্যালি স্ক্যান (আল্ট্রাসাউন্ড)ফিটাসের শারীরিক গঠন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ
২৪-২৮গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (GTT)গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস নির্ণয়
২৮-৩২রুটিন চেক আপ, রক্তচাপ এবং ওজন মাপা, রক্ত পরীক্ষাহিমোগ্লোবিন এবং আয়রনের মাত্রা নির্ণয়
৩২-৩৬আল্ট্রাসাউন্ডফিটাসের অবস্থান এবং অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাপ
৩৬-৪০নন-স্ট্রেস টেস্ট (NST), বায়োফিজিকাল প্রোফাইল (BPP)ফিটাসের হার্ট রেট এবং মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ, সামগ্রিক স্বাস্থ্য নির্ণয়

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top