জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘন্টায় নবজাতকের কী কী যত্ন নিতে হয়?

নবজাতকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি, কারণ তাদের শরীর তাপমাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম নয়। জন্মের পরপরই নবজাতকের শরীর থেকে তাপ দ্রুত হ্রাস পায়, যা হাইপোথারমিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক কমে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই নবজাতকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

উষ্ণতা প্রদান: জন্মের পরপরই নবজাতককে উষ্ণ এবং শুষ্ক তোয়ালে বা কম্বল দিয়ে মোড়ানো হয়। যদি সম্ভব হয়, কাংগারু কেয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে নবজাতককে মায়ের বুকের সাথে সরাসরি ত্বক সংযুক্ত করে রাখা হয়। এটি নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: নবজাতকের রুমের তাপমাত্রা উপযুক্ত রাখতে হবে, সাধারণত ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠান্ডা আবহাওয়ায় অতিরিক্ত গরম পোশাক বা কম্বল ব্যবহার করতে হবে।

ইনকিউবেটর ব্যবহার: যদি নবজাতক খুবই অপরিণত বা অসুস্থ হয়, তাহলে ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়। ইনকিউবেটর একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ প্রদান করে, যা নবজাতকের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

চোখের সুরক্ষা

নবজাতকের চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জন্মের সময় এবং পরবর্তী কিছু দিন তাদের চোখ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে।

অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট: জন্মের পরপরই নবজাতকের চোখে অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট বা ড্রপ প্রয়োগ করা হয়। এটি চোখের ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।

পরিষ্কার রাখা: নবজাতকের চোখ পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। পরিষ্কার তুলা বা নরম কাপড় দিয়ে চোখ মুছে দিতে হবে, বিশেষত যদি চোখে ময়লা বা আঠালো পদার্থ জমে থাকে।

নাভির যত্ন

নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন না নিলে সংক্রমণ হতে পারে। তাই নাভির যত্ন নিতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।

নাভির পরিচর্যার নিয়ম:

পরিষ্কার রাখা: নাভির চারপাশ সবসময় পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। নাভিতে পানি বা অন্য কোনো তরল লাগার পর নরম এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।

নাভিতে অ্যান্টিসেপটিক প্রয়োগ: নাভির যত্নে অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা অ্যালকোহল সোয়াব ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

ঢিলেঢালা পোশাক: নবজাতকের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে যাতে নাভির চারপাশে বাতাস চলাচল করতে পারে। টাইট পোশাক নাভির চারপাশে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

নাভি শুকানো: নাভির গোড়া শুকানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নাভি শুকানোর সময় পর্যন্ত নবজাতককে পুলে সম্পূর্ণ গোসল না করিয়ে স্পঞ্জ বাথ দেওয়া উত্তম।

সংক্রমণের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ: নাভির চারপাশে লালচে ভাব, ফোলা, পুঁজ বের হওয়া বা দুর্গন্ধ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নবজাতকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, চোখের সুরক্ষা এবং নাভির সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে উপরের পদক্ষেপগুলো মেনে চলা জরুরি। সঠিক যত্ন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নবজাতকের সুস্থতা এবং স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করে।

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top