অপরিণত শিশু জন্মের পরপর কী কী জটিলতা হতে পারে?

নবজাতকের জন্ম পরবর্তী শ্বাসকষ্ট একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা হতে পারে। শ্বাসকষ্টের দ্রুত এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নবজাতকের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ে শ্বাসকষ্টের কারণ, লক্ষণ এবং তার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

শ্বাসকষ্টের কারণ ও লক্ষণ

শ্বাসকষ্টের কারণ:

  • প্রিম্যাচিউরিটি (অপরিণত জন্ম): অপরিণত শিশুদের ফুসফুস পুরোপুরি বিকশিত হয় না, ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (RDS): অপরিণত নবজাতকদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ শ্বাসকষ্টের কারণ, যা ফুসফুসে সার্ফাকট্যান্টের অভাবের জন্য হয়।
  • মেকোনিয়াম অ্যাসপিরেশন সিন্ড্রোম (MAS): জন্মের সময় নবজাতক যদি মেকোনিয়াম-দূষিত অ্যামনিওটিক ফ্লুইড শ্বাস নেয়, তাহলে তার শ্বাসনালীতে অবরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
  • ট্রানজিয়েন্ট ট্যাকিপনিয়া (TTN): সাধারণত পূর্ণ-সময়ের নবজাতকদের মধ্যে দেখা যায় এবং এটি ফুসফুসে তরল জমা হওয়ার কারণে হয়।
  • জন্মগত ত্রুটি: ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, বা অন্যান্য অঙ্গের জন্মগত ত্রুটি শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
  • নিউমোনিয়া বা সংক্রমণ: জন্মের পরপরই নবজাতক যদি সংক্রমিত হয়, তবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

শ্বাসকষ্টের লক্ষণ:

  • দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (ট্যাকিপনিয়া): নবজাতক প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি বার শ্বাস নেয়।
  • নাকের পাখনা প্রসারণ: শ্বাস নিতে কষ্ট হলে নাকের পাখনা ফোলা হয়।
  • গর্জন বা গ্রান্টিং সাউন্ড: শ্বাস নেয়ার সময় নবজাতকের থেকে গর্জন বা গ্রান্টিং সাউন্ড শোনা যায়।
  • সায়ানোসিস: নবজাতকের ত্বক এবং ঠোঁট নীলচে হয়ে যায়, যা অক্সিজেনের অভাব নির্দেশ করে।
  • রিট্র্যাকশন: শ্বাস নিতে কষ্ট হলে নবজাতকের পাঁজরের নিচের পেশী টেনে ধরে।

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ:

  • প্রি-ন্যাটাল কেয়ার: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসা এবং প্রি-ন্যাটাল কেয়ার অপরিণত জন্ম প্রতিরোধে সহায়ক।
  • স্টেরয়েড থেরাপি: অপরিণত প্রসবের ঝুঁকি থাকলে মায়ের শরীরে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়, যা নবজাতকের ফুসফুসের বিকাশে সহায়ক।
  • প্রসবকালীন যত্ন: প্রসবের সময় মেকোনিয়াম-দূষিত অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের উপস্থিতি মনিটর করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা:

  • অক্সিজেন থেরাপি: শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে প্রথমে অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়, যাতে নবজাতকের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
  • সিপিএপি (CPAP): কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (CPAP) থেরাপি ব্যবহৃত হয়, যা নবজাতকের শ্বাসনালীর চাপ বজায় রাখে এবং শ্বাস নিতে সহায়ক হয়।
  • ভেন্টিলেশন: যদি অক্সিজেন থেরাপি এবং CPAP যথেষ্ট না হয়, তবে যান্ত্রিক ভেন্টিলেশন ব্যবহৃত হয়, যা নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক।
  • সার্ফাকট্যান্ট থেরাপি: রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (RDS) এর ক্ষেত্রে নবজাতকের ফুসফুসে সার্ফাকট্যান্ট প্রয়োগ করা হয়।
  • অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি: যদি সংক্রমণের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
  • মেকোনিয়াম রিমুভাল: মেকোনিয়াম অ্যাসপিরেশন সিন্ড্রোম (MAS) এর ক্ষেত্রে নবজাতকের শ্বাসনালী থেকে মেকোনিয়াম সরিয়ে ফেলা হয়।

শ্বাসকষ্ট একটি গুরুতর সমস্যা, তবে দ্রুত এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নবজাতকের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট মোকাবিলা করা এবং তার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top