সিজারের পর মায়ের যত্ন

সিজারিয়ান সেকশন ও তার পরবর্তী যত্ন

সিজারিয়ান সেকশন (Cesarean Section) বা সি-সেকশন একটি সাধারণ প্রসব পদ্ধতি যেখানে মায়ের পেট এবং জরায়ুর দেয়াল কাটার মাধ্যমে শিশুর জন্ম দেওয়া হয়। এটি সাধারণত তখনই করা হয় যখন স্বাভাবিক প্রসব ঝুঁকিপূর্ণ বা অসম্ভব হয়। এই অধ্যায়ে সিজারিয়ান সেকশন এবং তার পরবর্তী যত্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সিজারিয়ান সেকশন

সিজারিয়ান সেকশন করার কারণ:

  • ফিটাল ডিস্ট্রেস: শিশুর হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হলে এবং তা শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে।
  • অ্যাবনরমাল প্রেজেন্টেশন: শিশুর অস্বাভাবিক অবস্থান যেমন ব্রিচ প্রেজেন্টেশন বা ট্রান্সভার্স লাই।
  • প্রলম্বিত শ্রম: প্রলম্বিত শ্রমের সময় মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়াতে।
  • প্লাসেন্টা প্রিভিয়া: জরায়ুর নিচে প্লাসেন্টা থাকলে, যা স্বাভাবিক প্রসবে বাঁধা সৃষ্টি করে।
  • মায়ের স্বাস্থ্য সমস্যা: মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি।

সিজারিয়ান সেকশন পদ্ধতি:

  • প্রিপারেশন: সিজারিয়ান সেকশনের আগে মাকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। সাধারণত এপিডুরাল বা স্পাইনাল অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহৃত হয় যাতে মায়ের নিম্নাংশ অসাড় থাকে কিন্তু সে জ্ঞান হারায় না।
  • সার্জারি: মায়ের পেট এবং জরায়ুর দেয়াল কাটা হয় এবং শিশুকে বের করা হয়। তারপর কাটার জায়গা সেলাই করা হয়।
  • পোস্ট-অপারেটিভ পর্যবেক্ষণ: সার্জারির পর মাকে কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় যাতে কোনো জটিলতা না হয়।

সিজারিয়ান সেকশনের পরবর্তী যত্ন

সিজারিয়ান সেকশনের পর মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি, যাতে সে দ্রুত সেরে উঠতে পারে এবং নবজাতকের সঠিক যত্ন নিতে পারে।

শারীরিক যত্ন:

  • বিশ্রাম: প্রথম কয়েকদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যেহেতু সিজারিয়ান সেকশন একটি বড় সার্জারি, তাই শরীরের পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।
  • পেইন ম্যানেজমেন্ট: সার্জারির পর পেইন রিলিভার ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেইন কন্ট্রোল করতে হবে।
  • চলাফেরা: যত দ্রুত সম্ভব মাকে আস্তে আস্তে চলাফেরা করতে উৎসাহিত করা হয়। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং সার্জারির পর রিকভারি দ্রুত হয়।
  • আহার: সার্জারির পর হালকা খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে যাতে ডিহাইড্রেশন এড়ানো যায়।

সেলাইয়ের যত্ন:

  • পরিষ্কার রাখা: সার্জারির সেলাইয়ের জায়গা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রেসিং পরিবর্তন করতে হবে।
  • ইনফেকশন এড়ানো: সেলাইয়ের জায়গায় লালচে ভাব, ব্যথা, ফোলা বা পুঁজ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

শারীরিক অনুশীলন:

  • হালকা ব্যায়াম: সার্জারির কয়েক সপ্তাহ পর হালকা ব্যায়াম শুরু করা যেতে পারে। পায়ে হেঁটে বেড়ানো এবং হালকা স্ট্রেচিং শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

মানসিক যত্ন:

  • মানসিক সাপোর্ট: পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থন মায়ের মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত থাকতে মানসিক সাপোর্ট সহায়ক।
  • মা-শিশু বন্ধন: নবজাতকের সাথে সময় কাটানো এবং তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের মানসিক সুস্থতায় সহায়ক।

সিজারিয়ান সেকশন একটি নিরাপদ প্রসব পদ্ধতি হলেও, এর পরবর্তী সঠিক যত্ন নেওয়া মায়ের এবং শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সঠিক যত্ন এবং পর্যবেক্ষণ মাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে এবং নবজাতকের সুস্থতার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top