গর্ভাবস্থায় এনোম্যালি স্ক্যান কখন করা হয়? কী দেখে?

গর্ভধারণের সময় এনোম্যালি স্ক্যান (Anomaly Scan) একটি গুরুত্বপূর্ণ আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা যা সাধারণত ১৮-২০ সপ্তাহে করা হয়। এই স্ক্যানের মাধ্যমে শিশুর শারীরিক গঠন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করা যায়। এই অধ্যায়ে আমরা এনোম্যালি স্ক্যানের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া, এবং এর মাধ্যমে কী কী নির্ণয় করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।

এনোম্যালি স্ক্যানের উদ্দেশ্য

এনোম্যালি স্ক্যানের মূল উদ্দেশ্য হল শিশুর শারীরিক গঠন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক বিকাশ নির্ণয় করা। এর মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেমন:

  1. শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন: মাথা, মস্তিষ্ক, মুখমণ্ডল, গলা, হাড়, মেরুদণ্ড, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী, অন্ত্র, কিডনি, ব্লাডার, হাত ও পা।
  2. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ: বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক বিকাশ ও কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা।
  3. অস্বাভাবিকতা নির্ণয়: বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি এবং অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা।

এনোম্যালি স্ক্যানের প্রক্রিয়া

এনোম্যালি স্ক্যান সাধারণত নিচের ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. প্রস্তুতি: পরীক্ষার আগে চিকিৎসক আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিতে পারেন, যেমন প্রস্রাব ধরে রাখা বা নির্দিষ্ট সময়ে পানি পান করা।
  2. আল্ট্রাসাউন্ড প্রক্রিয়া: আল্ট্রাসাউন্ড টেকনিশিয়ান আপনার পেটের উপর একটি জেল লাগাবেন এবং আল্ট্রাসাউন্ড প্রোবের সাহায্যে শিশুর ছবি গ্রহণ করবেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট সময় নিতে পারে।
  3. চিত্র বিশ্লেষণ: চিকিৎসক বা আল্ট্রাসাউন্ড টেকনিশিয়ান স্ক্যানের সময় শিশু এবং তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি বিশ্লেষণ করবেন এবং কোন অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে তা চিহ্নিত করবেন।
  4. রিপোর্ট প্রদান: স্ক্যানের পর চিকিৎসক আপনাকে রিপোর্ট প্রদান করবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন।

এনোম্যালি স্ক্যানের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় যা

  1. মাথা ও মস্তিষ্কের গঠন: মাথার আকার, মস্তিষ্কের বিকাশ, এবং ভেন্ট্রিকল গঠন নির্ণয় করা।
  2. মুখমণ্ডল ও গলা: ঠোঁটের ফাটল, মুখমণ্ডল এবং গলার গঠন নির্ণয় করা।
  3. মেরুদণ্ড: মেরুদণ্ডের গঠন এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নির্ণয় করা।
  4. হৃৎপিণ্ড: হৃদপিণ্ডের চারটি কক্ষ, হৃদস্পন্দন এবং রক্ত প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা।
  5. অন্ত্র ও পাকস্থলী: অন্ত্র, পাকস্থলী এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গের গঠন ও কার্যকারিতা নির্ণয় করা।
  6. কিডনি ও ব্লাডার: কিডনি এবং ব্লাডারের গঠন এবং কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা।
  7. হাত ও পা: হাত ও পায়ের আঙুলের সংখ্যা, আকার এবং গঠন নির্ণয় করা।

এনোম্যালি স্ক্যানের গুরুত্ব

  1. প্রাথমিক নির্ণয়: এনোম্যালি স্ক্যানের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা এবং জন্মগত ত্রুটি চিহ্নিত করা যায়।
  2. পরবর্তী পদক্ষেপ: যদি কোন অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হয়। এটি চিকিৎসকের জন্য পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়ক।
  3. পরিবারের প্রস্তুতি: অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত হলে পরিবারকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।

সম্ভাব্য ঝুঁকি

এনোম্যালি স্ক্যান সাধারণত নিরাপদ এবং কোন বড় ঝুঁকি থাকে না। তবে, আল্ট্রাসাউন্ডের সময় যদি কোন অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

Related Posts

সর্বশেষ পোস্ট

সর্বাধিক পঠিত পোস্ট

Scroll to Top